সকাল থেকেই প্রচণ্ড বৃষ্টি আর বাতাস।
বিকেলে গ্রোসারি করতে গেলাম। রাস্তায় অনেক গাড়ি। পথে নেমে রেডিও চালু করতেই বেজে উঠল সেতার। চমকে উঠলাম। নানান দেশি সুর আর গানের ভিড়ে আজ এই চ্যানেলে সেতার কেন? উৎকর্ণ হলাম সাথে সাথেই। এত সুন্দর সুর…
কে বাজিয়েছে?
নাম জানা গেলো না কিন্তু এক সুর শেষ করে আরেক সুর শুরু হয়ে গেলো।
ততক্ষণে বৃষ্টি থেমেছে কিন্তু আকাশে মেঘ উড়ে যাচ্ছে ছায়ার মতো।
স্যামস ক্লাব আগে যাব নাকি ডিলন্স? ভাবতে ভাবতেই লোকাল রেডিওতে এবার বলল, বীটলস্-এর জর্জ হ্যারিসনের সাথে এই সেতার শিল্পীর বন্ধুত্ব ও কাজের কথা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানেও সেতার বাজিয়েছিলেন এই শিল্পী।
বাংলাদেশ! ১৯৭১! শব্দদুটো শুনেই আরও আগ্রহী হয়ে উঠলাম। চলন্ত অবস্থাতেই ভলিউম বাড়িয়ে একাকার। কিন্তু অল্পকথার পরেই আবার শুরু হলো সেতারের সুর। শিল্পীর নাম কী? কোন সুরে আজ উইচিতার মেঘাচ্ছন্ন শহর ডুবেছে?
আরেকটু মন দিয়ে কান পাতলেই বুঝে গেলাম কার কথা হচ্ছে। আর কেই বা হতে পারে এমন সেতারবাদক! কিংবদন্তি রবিশঙ্কর ছাড়া? তারই তো জন্মদিন…
খানিক বাদে স্যামস ক্লাবের দিকে আগাতেই গাড়ির উইন্ডশিল্ডে আচমকা এক দু ফোঁটা বৃষ্টি এলো, ঘনঘন। বাধ্য হয়ে ওয়াইপার চালু করতে হলো। বৃষ্টির মাঝে, সেতারের তালে তালে ওয়াইপার দুটোর ডানে-বামে নেচে ওঠা যেন নৃত্যশিল্পীদের অভিবাদন।
এ বছর বেশ আগেই ফুটে উঠেছে গোলাপি-সাদা চেরি ফুল। ল্যাভেন্ডার ফুলেও ঢেকে গেছে পথের দু পাশ। তাই, আকাশে ঘন ছাই রঙ ছেয়ে থাকার পরেও, উজ্জ্বল রঙে পথ রঙিন। মোলায়েম ঠাণ্ডা বাতাস গাল ছুঁয়ে যায় অদ্ভুত অধিকারে।
মহামারীর দুঃসহ ছোবল, নিত্যদিনের দুঃসংবাদ আর অমানুষিক ক্লান্তির পরেও এপ্রিল কেন এত অপরূপ!
ফুলগুলোই বা কেন এমন স্পর্ধা দেখিয়ে সৌন্দর্য মেলে ধরে নির্লজ্জের মতো? যেন বলে ওঠে,
মোহে পড়ো আমার, এই রঙিন পৃথিবীর…
যেহেতু আমরাই সেরা— চিত্রশিল্পী সর্বশ্রেষ্ঠ!
— তোমার জন্য যথেষ্ট…