ব্যাকটেরিওলজিস্ট, নীরব, একগুঁয়ে স্বামী আর তার অনন্য সুন্দরী, অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলা স্ত্রীর বিষাক্ত সম্পর্কের অন্ধকারে মহামারী ছড়াতে থাকে সর্বত্র। বাতাসে লাশের গন্ধ, কুয়া থেকে নদীর পানিতে মৃত্যুভয় আর কাঁচা সালাদের পরতে আতংক কিংবা উপেক্ষা অনুভব করতে করতে বুঝতে পারা যায়, দুজন মানুষ পরস্পরকে ঠিক কতটা ঘৃণা করতে পারে। একজন ঔপন্যাসিককে তখন মনে হয় চিত্রশিল্পী, যে চমৎকার সব বর্ণনা আর ব্যাখ্যায় রাজপথ থেকে ঘরের বন্ধ জানালা, সব ভরে ফেলছে বিক্ষিপ্ত আঁচড়ে। আর সন্তর্পণে আড়াল করা দীর্ঘশ্বাস বলে, দুজনের মানুষের মাঝের দূরত্ব অতিক্রম করাই জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ ভ্রমণ।
পৃথিবীতে বাঁচতে এসে কেউ খোঁজে টাকাকড়ি, কেউ ঈশ্বর, কেউ হুইস্কি, কেউ শরীর, কেউবা শুধুই প্রকৃত প্রেম। কিন্তু কেন? উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখি; তথাকথিত সামাজিকতা আর ট্যাবু মিথ্যা বিজ্ঞাপনের মতো; এক অদৃশ্য হাত দিয়ে খামচে ধরছে সকল চিন্তা।
সকল ডামাডোল, অনুযোগ, অভিমান, বিষাদ আর অন্তর্গত দ্বন্দ্ব পেরিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করে কী আছে এই নীল-সবুজ গ্রহটিতে যার জন্য আমরা হাতে নেই একশ বছর আগের উপন্যাস? কেন টিভিতে চলে প্রিয় শিল্পীর সিনেমা? কেন প্লে লিস্টে বাজে কান্না লুকানো সুর? কেন ভালোবাসি? জগতের শ্রেষ্ঠ প্রাণ তো ভাইরাসের মতো কেবলই শিথিল মুহূর্তের অপেক্ষায় থেকে, পরবর্তী আঘাতের পরিকল্পনা করে। এতকিছুর পরেও কেন বাঁচি? কেউ কি জানে? অনবরত পায়চারী করতে করতে তখন ‘দ্য পেইন্টেড ভেইল’-এ সমারসেট মমের লিখে যাওয়া কিছু কথা মনে পড়ে।
হ্যাঁ, কেবলমাত্র একটি জিনিসই এই জগতকে সকল বিশৃঙ্খলা ও ঘৃণা ছাড়া বাস করার জন্য সম্ভব করে তোলে। তা হ’ল সৌন্দর্য। যে ছবিগুলি শিল্পী আঁকে, গীতিকার যে সঙ্গীত রচনা করে, লেখকের যে বই আমাদের নতুন করে বাঁচতে শেখায় এসবের মধ্যে যে সৌন্দর্য, তাই হলো বিশুদ্ধ। অনন্য। সে সৌন্দর্যের মাঝে বসবাস করা সবচেয়ে সুখী ও সুন্দর জীবন। সেটাই নিখুঁতভাবে বেঁচে থাকা। এসব বাদে আর কিছু নেই। কিচ্ছুটি নেই।
তাই, ‘দ্য পেইন্টেড ভেইল’ ইংল্যান্ড, হংকং আর চীনের মহামারী ছুঁয়ে আসা কিটির এক অনন্য যাত্রা। যেখানে অন্ধকার থেকে আলো জ্বালাতে গিয়ে কিটির নিজেরই জ্বলতে হয়েছে বারবার…
উপন্যাসঃ দ্য পেইন্টেড ভেইল
উইলিয়াম সমারসেট মম্