Blog

রেইন ডিয়ার ছুটিয়ে আকাশে উড়ে যাওয়া সান্টাক্লজের গল্পটা প্রায় সবারই জানা। পিঠে ঝোলা,পায়ে বুট, মুখভর্তি তুষারের মতো ধবধবে সাদা দাড়িগোঁফের জঙ্গল, আর গায়ের লাল-সাদা কাপড় পরা সান্টা, নর্থ পোল থেকে প্রতি বছর উড়ে বেড়ায় সর্বত্র। কিন্তু, তার আড়ালে লুকিয়ে থাকা জলজ্যান্ত মানুষ সেইন্ট নিকোলাস কিংবা দু চোখে স্লিপিং পিলের মতো গাঢ় বিষণ্ণতার সদা গম্ভীর-ক্লাউসকে চেনে কতজন? তারচেয়েও বড় কথা, টানা ৩০ বছর ধরে সান্টাক্লজের কার্টুন এঁকে যাওয়া সিভিল ওয়ার কার্টুনিস্ট, টমাস নাস্টকে অনেকে মনেও রাখে না। অথচ, ক্রিসমাস হোক কিংবা তুষারের দিন সান্টাকে বারবার মনে করে শিশু থেকে আমজনতা।

কিন্তু পাখির চোখের মতো তাকিয়ে যে ফেব্রুয়ারি মাস আমি দেখতে পাই, তা মেঘের রাজ্য ছাপিয়ে রেইন ডিয়ার না, রবার্ট ফ্রস্টের কবিতা মতো কালো কাকে ভরা। তাই দিনগুলো হয়ে ওঠে কোন দরবেশের গলার স্ফটিক মালার মতই একঘেয়ে। অতিমারির দিনে কোয়ারেন্টাইন বাদেও হতে হয় গৃহবন্দী।

এই সময়ে শুধু উইন্টার সার্ভিস দেওয়া স্নো শাভলারদের ঘোরতর ব্যস্ততা। গা কাঁপানো ঠাণ্ডায় জমে যেতে যেতে ড্রাইভওয়ে, সাইডওয়াক থেকে এরা তুষার সরায়, কেউ বা পরিত্যক্ত শহরের পথিকের মতো দূর করে সমস্ত শুভ্রতা। তারপরেও সারাদিন প্যানপ্যানে কান্নার মতো তুষার। সত্যি বলতে, গত সাত বছরে এমন নীরস, ক্লান্তিকর, এলোমেলো তুষারের শাটল বাসে উঠেনি কেউই। যতই শীত পড়ুক, অল্প হেঁটে চলে যাওয়া গেছে কফি হাউজ, গ্রোসারি শপ, লাইব্রেরি, শপিং মল কিংবা ইশকুলে। তবে এবার যেন নগরীর সমস্ত রোদ গেছে বিদেশ ভ্রমণে। যার বাড়ি ফিরে আসতে লাগবে বহুদিন।
তবে পৃথিবীর বুকে কোথাও শান্তি আছে, এই ভাবতে গিয়ে ঔজ্জ্বল্যহীন রাতে মনে পড়ে, সান্টাক্লজের থেকে মোজার ভেতর উপহার না পেলেও, খুব ছোটবেলা রঙিন কাপড় পড়ে চোঙ্গা বাজিয়ে সুরে সুরে চানারুর-র-র-র ডেকে যাওয়া এক অলীক বন্ধু আমি পেয়েছিলাম। শেষ বিকেলে বাড়ির গেটের কাছে দু টাকার নোট হাতে অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কখন তার ডাক শুনতে পাব! কখন সে আসবে, কখন আমি চানাচুর কিনব। যদিও চানাচুরটুকু স্রেফ বাহানা। আমি শুধুই সেই অলীক বন্ধুটিকে দেখতে চাইতাম। যার টুপি, রংচঙে পোশাক, রহস্যময় কণ্ঠ ও দূর থেকে হেঁটে আসার দীর্ঘ ছায়া, আমার হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার মতো রহস্যময় মনে হতো। মনে হতো; পিঠের ঝোলায় শুধু চানাচুর না, বারো রকমের লেবেঞ্চুস থেকে স-অ-ব রকমের জাদুর কাঠি ও রূপকথার প্রাণ ভ্রমরা আছে। অন্ধের মতো যার পিছু নিয়ে আমি— বাড়ি থেকে, চেনা জগত থেকে, মার কাছ থেকে, ইশকুল থেকে, কোচিং থেকে, নাচের ক্লাস থেকে, খেলার সাথীদের থেকে, গোটা শহরটা থেকেই পালাতে চাইতাম— প্রাণপণে।

পালাতে পারিনি, তবে সেই স্মৃতি গেঁথে গেছে মাথার ভেতর। এখানে, উডলন স্ট্রিট এখন যখন, আসন্ন তুষার ঝড়ের ভীতিতে সুনসান হয়ে যায়, যখন রোদ মরে যায়, বাতাস পড়ে আছড়ে, যখন গাড়িগুলো জমে যাওয়া তুষারে পিছলাতে থাকে কার্টুনের মতো, তখন আমি দরজার এপাশ থেকে আবার শুনতে পাই সেই ডাক, অস্পষ্ট ঘুঙুর— আবার হয়ে উঠি সেই নিমগ্ন শ্রোতা। সেই মেয়েটি…

লেখাটি নিয়ে মন্তব্য প্রদান করুন।

Your email address will not be published. Required fields are marked *